শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞাপন
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন ।  যোগাযোগঃ 01977306839

“স্মরণে কবি আল মাহমুদ “

Reporter Name / ১৩৬৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২, ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ

 লেখকঃ- মিজান বিন মজিদ আমার একজন সহকর্মী আমার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “আপনি আসলে সহজ সরল মানুষ। ” ব্যাপারটা ভেবে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। যেহেতু সহজ সরল মানুষ সেহেতু কবিতার মতন ‘জটিল ও শিল্পীত’ বিষয়ে আমার ধারণা অস্পষ্ট। বিশেষ করে আধুনিক কবিতার রস ও রসায়ন এবং তার অন্তর্নিহিত ভাববস্তু অনুধাবনে আমার অপারঙ্গমতা স্বীকার করি। কিন্তু দুইচারটা কবিতাও যদি বুঝতে পারি তার মধ্যে কবি আল মাহমুদের কবিতাই বেশি। তিনি ও আমি প্রান্তিকের মানুষ বলেই হয়তো সখ্য হয়ে যায় স্বয়ংক্রিয়ে…। বাংলা কবিতার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কয়জন একেবারে নিখাদ কবিত্ব দিয়ে লোকমানস জিতে নিয়েছেন তাদের মধ্যে (Top Ten) একজন তিতাস পারের নিখুঁত বালক আল মাহমুদ। তাঁর উপলব্ধির প্রাখর্য, বয়ানের সৌকর্য এবং বিন্যাসের পারম্পর্য আমার চেনাজানা জগতের মধ্যে অতুল অদ্বিতীয়। আমার আপনার নিত্যদিনের চিরপরিচিত শব্দের মধ্যে কবিতার অলঙ্কার এমন অদ্ভুত সাজিয়ে দেন যে, অবাক না হয়ে পারি না। ধরুন, ‘চিতই পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ’ কথাটার মধ্যে কী এক অমিয় সুধা ঢেলে দিলেন যেন! অথবা ‘মক্তবের মেয়ে আয়েশা আক্তার’ এর মতন সাদামাটা মেয়ের মধ্যে সঞ্চারিত করেন নিদাঘ প্রেমের প্রথম আলাপ…। তত্ত্বের কপচানি দিয়ে নয়,মৌলিক চিন্তার উদ্ভাসন এবং নিরন্তর নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, যেদিকে তাকালে কবিযশলিপ্সু ভেতো বাঙালিকাঙালি পুত্রগণ জ্বলেন হিংসায়-প্রতিহিংসায়। নিজস্বতা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র সত্তায় আপন ‘সার্বভৌমত্ব’ সৃজন করা সহজসাধ্য নয়। আল মাহমুদ সাহিত্য বিচারে সর্বাঙ্গে সার্বভৌম কবি। তাঁর কবিতা পাঠের পর নিঃস্বার্থ অনুভব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সোনালী কাবিন’ পাঠ পাসের পথ দেখিয়েছে।অব্যাহত অধ্যয়ন তাঁর প্রতি ক্রমানুরক্তি ত’য়ের করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর জেলাকে লোকে অকারণ-কারণ ‘ট্রল’ করে দেখে মন খারাপ হয়। শুধু আল মাহমুদের জন্মজেলা হিসেবেই ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সম্মানের উচ্চ আধারে উঠে যাক। একবার তিনি কবিতা পাঠ করছিলেন ভূপালে। শ্রোতারা কেন তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলেন না সেইজন্য সভাপ্রধান হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, “উপমহাদেশের সেরা কবি দণ্ডায়মান হয়ে কবিতা পড়ছেন,আর আপনারা বসে আছেন!” পশ্চিমবঙ্গের শক্তি চট্টোপাধ্যায় যথার্থ চিনেছিলেন কবিকে। আমরা অজ্ঞ,অনাগ্রহী তাঁর মতন শালপ্রাংশু মানের কবিতার রাজপুত্তুরকে সম্মান জানাতে। তাঁর গদ্যও আমাদের সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। উপন্যাসে ছোটগল্পে আত্মজীবনীতে স্বরাট তৈরি করে প্রতিদ্বন্দ্বিদের জ্বালা বাড়িয়েছেন। গতকাল একটা লেখায় তাঁর ‘পুরুষ সুন্দর’ লেখার অকারণ নিন্দা দেখলাম। এই বইয়ের মধ্যে কোন নেতিবাচকতা নেই। বরং ভুল থেকে ফিরে আসবার অদ্বিতীয় নজির উপস্থাপিত হয়েছে। শব্দের বেফাঁস ব্যবহার নেই,আড়ম্বরপূর্ণ অহমিকা নেই,অযাচিত কাঠিন্য পরিহার করেছেন। জুলাইয়ে জন্ম নেয়া এই কবির প্রতি বাংলাদেশের ক্ষুদ্রমণা সাহিত্য জগৎ ব্যভিচার করেছে অনেক। কিন্তু শক্তির দুর্বার গতি, টেকসই শিল্পচিন্তার ব্যাপকতা আর অপরাজেয় মনোবল তাঁকে ঠিকই পৌঁছে দিয়েছে শিল্পসাহিত্যের হিমালয়ে। অর্বাচীন অবিমৃষ্যকারী লাভালাভের বেসাতিতে নিমজ্জমান যে কেউ তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতিতে অবমানবোধ করতেই পারেন। কিন্তু কবিতার সত্যিকারের অনুরাগীদের কাছে তিনি সততই গ্রাহ্য হবেন অনন্য দেদীপ্যমানতায়,অবিনশ্বর মান্যতায়। আদর্শের প্রশ্নে তিনি যে পথে ফিরেছেন, সেই পথ সর্বাংশে অনুকরণ কষ্ট সাধ্য হলেও সেটাই আরাধ্য পথ…। কবি আল মাহমুদ কোন মহাগ্রন্থের নাম নয়,তবে তিনি তাঁর ধারার এক অবিনাশী মহাগ্রহ,যাঁর প্রভা নিয়তই ঠিকরে পড়বে দিগন্তরে…।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Design & Developed by : BD IT HOST