শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞাপন
আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন ।  যোগাযোগঃ 01977306839

ভরা মৌসুমেও সীতাকুণ্ডের সন্ধীপ চ্যানেলে ইলিশের অকাল

Reporter Name / ১২৭০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রাফি চৌধুরী,সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃচট্রগ্রামের সীতাকুণ্ড কুমিরা ফেরী ঘাটে ভিড়ছে দল বেধে কূলে ভীড়ছে সারি সারি ইলিশ ধরার নৌকা। ঘাটে নৌকা ভীড়তেই হুমরী খেয়ে পড়েন দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষামান জেলে পরিবারের নারী পুরুষ ও উৎসুক ক্রেতারা। তবে কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে ঘাটে ফিরে আসা নৌকা থেকে মলিন বদনে নেমে আসছেন জেলেরা। কোনো নৌকায় পাঁচ কেজি, আবার কোনো নৌকায় আট,দশ কেজির বেশি ইলিশ নেই। জেলেরা জানালেন,সাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখার পর অনেক আশা নিয়ে তাঁরা গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাঙ্খিত ইলিশের দেখা না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন তাঁরা। এতে বোটের জ্বালানি খরচ ও দৈনিক মজুরির বিনিময়ে নেওয়া জেলেদের পারিশ্রমিকের টাকা উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের। ফলে ভরা মৌসুমেও লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের। অন্যদিকে মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় উজান থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলে মিঠাপানির স্রোত আসেনি। ফলে এ চ্যানেলে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কামাল উদ্দিন চৌধুরী আমাদের সময় কে জানায়,গত বছর ৬৫ দিন বন্ধের পর প্রথম ১২ দিনে ২০০ টনের বেশি ইলিশ ধরা পড়েছিল। কিন্তু এ বছর ৯০ টন ইলিশ ধরা পড়েছে। আজ সোমবার দুপুর ২ টায় কুমিরা ঘাটে গিয়ে দেখা যায়,সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে ঘাটে ফিরেছে সারি সারি নৌকা। কোনো নৌকায় পাঁচজন,আবার কোনো নৌকায় এর বেশি শ্রমিক। কিন্তু মাছের সংখ্যা পাঁচ থেকে আট কেজির বেশী নয়। ইলিশ কম পাওয়ায় পাইকারেরও দেখা নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট ৩৮টি জেলে পল্লী আছে। এসব পল্লীতে বসবাসকারী অর্ধ লক্ষাধিক জেলের জীবিকা চলে সাগরে মাছ শিকার করে। সারাবছর বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে বর্ষায় আষার,শ্রাবন,ভাদ্র আশ্বিন মাসে মৌসুমী ইলিশ শিকার। মূলত বর্ষায় এই ইলিশ শিকার ও বিক্রির টাকাতেই পুরো বছর সংসার চলে তাঁদের। বলাবাহুল্য প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। যা বিক্রি করে দুঃখ দূর করেন জেলেরা। জেলেদের এই ইলিশের মৌসুম ছিলো মূলত জুন-জুলাই-আগষ্ট। প্রাচীনকাল থেকে এই তিন মাসে প্রচুর ইলিশ শিকার করতেন জেলেরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার মে মাস থেকে জুলাই মাসের মোট ৬৫ দিন পর্যন্ত সাগরে মাছ শিকার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করেন। সীতাকুণ্ডে কুমিরা এলাকার জেলে হরিলাল জলদাশ জানান, সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা ২৩ জুলাই রাত ১২টার পর থেকে সাগরে গিয়ে মাছ শিকারের আশায়। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জাল ফেলে চরম হতাশ হতে হয়েছে আমাদের। স্বাভাবিকভাবে আমরা একটি নৌকাতে ৫-৭ জন কিংবা বড় নৌকায় আরো বেশি জেলে একসাথে মাছ শিকারে যাই। এসব নৌকায় প্রতিবার জাল তুললে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকারও ইলিশ পেতাম আগে। কিন্তু এবার এত দূরে গিয়ে ২-৪ হাজার টাকার মাছ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। তাও আবার বেশিরভাগ ছোট সাইজের মাছ। বড় সাইজের মাছ নেই বললেই চলে। এবারের মতো এতটা খারাপ চিত্র এই চ্যানেলে সচরাচর আর কখনো দেখা যায়নি। সাগর থেকে খালি হাতে ফিরে আসা বিপ্লব জলদাস জানান,সরকারি নিষেধাজ্ঞায় টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছিলেন তাঁরা। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের আশায় সাগরে গেলেও ফিরেছেন খালি হাতে। গত ১২ দিনে পাঁচ হাজার টাকার ইলিশ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বোর্ড ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। ভরা মৌসুমে ইলিশের খরা দেখে তাঁদের মন ভালো নেই। বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকূল গ্রামের জেলে নন্দলাল জলদাশ বলেন, আমরা তো শুধু একটি মৌসুমের দিকেই চেয়ে থাকি। আগে জুন-আগষ্ট পর্যন্ত মাছ শিকার করতাম। এখন সরকারের নির্দেশ মেনে জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু করেছি। গত প্রায় দুই সপ্তাহেও আমরা কাংখিত ইলিশ পাচ্ছি না। তাহলে ৬৫দিন মাছ শিকার বন্ধ করে কি লাভ হলো বুঝতে পারছি না। সরেজমিনে বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকূল,কুমিরা-সন্দ্বীপ ঘাট, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর সাগর উপকূলীয় জেলে পাড়া ঘুরে জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে চরম হতাশা দেখা গেছে। তবে অনেক জেলে এখনো বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আশা এখনো ভারি বৃষ্টি হতেও পারে। আর কেবল তা হলেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে তাঁদের। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী আমাদের সময় কে আরো বলেন,এবার বর্ষা কম হওয়ায় উজান থেকে পর্যাপ্ত মিঠা পানির স্রোত সন্দ্বীপ চ্যানেলে আসছে না। ফলে গভীর সাগর থেকেও চ্যানেলগুলোর দিকে ইলিশ কম আসছে। তাই ইলিশ ধরা কম পড়ছে। কিন্তু যারা গভীর সমুদ্রে জাল ফেলছে তাদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে দাবী করেন তিনি।
এদিকে বাড়বকুন্ডের মাছ ব্যবসায়ী দাদনদাতা কাসেম জানায়,ইলিশ মাছ পেতে জেলেদের কে টাকা দিয়েছি আগ্রিম,কিন্তু জেলেরা ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পাওয়ায় আমরা হতাশা ভূগছি।টাকা কিভাবে তোলবো,জেলেরা কিভাবে চলবে তানিয়ে আমরা চিন্তিত।তবে আশা ছাড়েননি,ভারী বৃষ্টি হলে হয়তো ইলিশ ধরা পড়বে জেলেদের জালে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Design & Developed by : BD IT HOST