সাগরিকা আক্তার মৌসুমী ঢাকা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো ওমর ফারুককে পর পর দুইবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বদলীর আদেশ দেয়া সত্বেও বদলিকৃতস্থানে যোগদান না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে বহাল রয়ে গেছেন। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২২খ্রি. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ড.মো ওমর ফারুক-কে বদলি করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব পদে দেয়া হলেও তিনি সেখানে যোগদান করেন নি এর আগে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অন্য আদেশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে বদলী করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে তিনি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে রয়েছেন। পরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি আদেশ উপেক্ষা করায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.মো ওমর ফারুকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করার বেশ কয়েকমাস পরেও অধিদপ্তরের অনিয়ম দূর্নীতির মাত্রা কমিয়ে আনার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে সাধারণ শিক্ষকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেখা গেছে। এবিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.ওমর ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনবলের ঘাটতির কারনে এমপিও দিতে পারছেন না বলে জানান। তার বদলীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে রাজি হননি। একাধিক সুত্রে জানা গেছে ২০২১সালের ডিসেম্বর মাসে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তৎকালীন মহাপরিচালক মো.হেলাল উদ্দিন আহমেদকে তাৎক্ষণিক বদলী করে দেয়ার পর ড.মো.ওমর ফারুক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ওমর ফারুক -কে দুইবার অন্যত্র বদলী করলেও তিনি সে আদেশ উপেক্ষা করেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আর এক রাঘববোয়াল এমপিও কর্মকর্তা বিমল মিশ্র। এমপিও ছাড়ের বিপরীতে উৎকোচ গ্রহণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও এমপিওর দাবি নিয়ে গত ৩রা জিসেম্বর ২০২১ তারিখে কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে আসলে কর্মচারি দিয়ে তাদের উপর হামলা করান বিমল মিশ্র। এ ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শেরেবাংলা নগর থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এর পরেও তিনি জাতীয় শুদ্ধাচার পুরষ্কার পেয়েছেন। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে গত ৫ বছরে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সংখ্যা বেড়েছে অনেক,তবে সে তুলনায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মীর সংখ্যা খুবই কম।সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর তরুণদের নাম লেখাতে হচ্ছে শিক্ষিত বেকারের তালিকায়। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ।তাদের কর্মসংস্থান ও আত্নকর্মসংস্থানে কারিগড়ি শিক্ষার গুরত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও দক্ষ জনবলের যথেষ্ট চাহুদা রযেছে।তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নে কারিগড়ি শিক্ষাকে অর্থবহ করার জন্য কারিগরি শিক্ষার আরও সম্প্রসরণ এবং মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।সেই লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগরি শিক্ষায় ২০২০ সালে ভর্তির হার ২০ শতাংশ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল,যা পূরণে ব্যর্থ হয় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ৮ হাজারেরও বেশী প্রতিষ্ঠান।কিন্তু এসব অনেক প্রতিষ্ঠানই নামসর্বস্ব।এদের মানহীন কারিগরি শিক্ষায় বাড়ছে না দক্ষ জনশক্তি। সাধারণ স্কুল- কলেজে কোনো ট্রেড কোর্স না থাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেও শূণ্য দক্ষতায় থেকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।ফলে বিদেশের শ্রমবাজারও সেভাবে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। আবার দেশের কারিগরি শ্রমবাজারের উচ্চ পদগুলোয়ও আধিপত্য বিদেশিদের। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ও কর্মমুখী শিক্ষার সার্টিফিকেট দেয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।এসব কারিগরি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের সুনিদ্রিষ্ট নীতিমালাও নেই।ফলে মানহীন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনলেও দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, কারিগরি ঞ্জানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে গঠিত হয়েছিলো কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।বর্তমানে এই বোর্ড ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং,ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার,ডিপ্লোমা ইন ট্রেক্সটাইল,ডিপ্লোমা ইন ফ্রিশারিজ ও ডিপ্লোমা ইন জুট টোনোলজি কোর্স;ও ডিপ্লোমা ইর ফরেস্ট্রি,২ বছর মেয়াদি এসএসসি/দাখিল (ভোকেশনাল) এবং এইচএসসি (ভোকেশনাল/বিএম) কোর্স অনুমোদন ও পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এসব ছাড়া কর্মমুখী শিক্ষা, বিশেষ করে ৩ মাস,৬ মাস ও ১ বছর মেয়াদী বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে এই শিক্ষা বোর্ড।কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখে বের হচ্ছে,বোর্ড তার কোন খোঁজখবর রাখে না। যথাযথ তদারকি না থাকা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কারিগরি শিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও যুগোপযোগী করে তোলা যায়নি শিক্ষার্থীদের কাছে। এ শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানেও রয়েছে গোঁজামিল।২০০৯ সালে দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল মাএ ১ শতাংশ। সরকারিভাবে দাবি করা হয়,দেশের ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় পড়াশোনা করেছে । কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেছেন, পরিসংখ্যানে কারিগরি শিক্ষার্থী হিসাবে ৩ মাস ও ৬ মাস মেয়াদি বিভিন্ন শর্টকোর্স এবং এইচএসসি(ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করা হয় – যা যৌক্তিক নয়।কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের হিসাব মতে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২ লাখের মতো।তবে আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাস্তবে কারিগরিতে শিক্ষার্থীর হার মাএ ৮.৪৪ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষায় সরকারি হিসাবেই দিন দিন মেয়েদের সংখ্যা কমেছে ।