রাফি চৌধুরী,সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম। এখানে রয়েছে সবুজ পাহাড় ও সমুদ্রের নীল জলরাশি। এটি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার কারণে এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এর ব্যাপকতা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সমুন্নত রেখে পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও নগরায়ণে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। পরিবেশ সমুন্নত রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর একটি আদর্শ স্থান। চট্টগ্রাম সদর শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০কিমি। এখানে ০৫টি মৌজায় মোট খাস জমির পরিমাণ প্রায় ২৮০০ একর। এর পূর্ব ও উত্তরে রয়েছে চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে চট্টগ্রাম শহর। কিন্তু কতিপয় ভূমি দস্যু নব্বই দশক থেকে এখানে পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে জঙ্গল ছলিমপুরকে অবৈধ বসবাসকারী অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করা ঝুকিপূর্ণ প্লটগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপকর্ম করে আসা সন্ত্রাসীদের নিকট বিক্রি করা হচ্ছে । শতাংশ প্রতি বিশ হাজার টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত হারে বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাংবাদিকসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা যাতে এ এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় প্রবেশের মুখে ব্যারিকেডসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে গোপন ক্যামেরাসহ সোর্স নিয়োগ করে প্রশাসনের পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে কোন অভিযানের বিষয়ে জঙ্গল ছলিমপুরের প্রবেশমুখে অবস্থানরত সোর্সের মাধ্যমে সন্ত্রসীরা আগে থেকেই জেনে য়ায়, ফলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথেই সন্ত্রাসীরা উক্ত এলাকা ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে য়ায়। এ কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা যায় না। জঙ্গল ছলিমপুরের খাস পাহাড়গুলো নির্বিচারে কেটে বিক্রি করার ফলে সন্ত্রাসীরা একদিকে কোটি কোটি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। গত তিন চার বছরে পাহাড় ধ্বসে এখানে ০৫ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। এই পর্যন্ত জঙ্গল ছলিমপুরে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে প্রায় ৪০০ একর। নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধে বর্তমান জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। গত পহেলা জুলাই মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ও মাননীয় মেয়র মহোদয়কে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম জনাব মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রথমবারের মত জংগল সলিমপুর পরিদর্শন করে একটা মহাপরিকল্পনার কথা জানান। এরই প্রেক্ষিতে বিগত ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপ পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম উক্ত স্থান পরিদর্শনে গেলে তাদের সামনেই গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় মেম্বারকে মারধর করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন আলী নগরের সম্রাট খ্যাত ইয়াসীন। পরে ১৬ জুলাই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার প্রেক্ষিতে তাকে সহ ৫ জনকে কোতোয়ালি থানা এলাকা হতে ১৮ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে নির্বিচারে পাহাড় কেটে সরকারি জমি দখলের অপরাধে ২০ জুলাই পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সর্বশেষ বিগত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসন উক্ত নিষিদ্ধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ৩ টি স্ক্যাভেটর, ৬ টি ড্রাম ট্রাক ও ১ টি ট্রাক জব্দ করা হয়। এই স্থানকে ভূমিদস্যুদের হাত থেক মুক্ত করে এখানে বসবাসকারী ছিন্নমূল জনসাধারনকে পুনর্বাসন জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়বেষ্টিত জঙ্গল ছলিমপুরে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প তৈরীর কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে। জঙ্গল ছলিমপুরে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে:যথাঃ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি স্পোর্টস ভিলেজ, জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল, চট্টগ্রাম নগরীর সর্বসাধারণের জন্য একটি সাফারি পার্ক,কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মান একটি নান্দনিক মসজিদ, উচ্চ শক্তির বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র , পাহাড় ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবংছিন্নমূল জনসাধারণের পুনর্বাসন।চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি মাননীয় মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি, বিশেষ অতিথি চট্রগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী অন্যান্যদের মধ্যে বিদ্যুতের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম, মন্ত্রীর একান্ত সচিব রেজ্জাকুল ইসলাম উপপরিচালক স্থানীয় সরকার ড. বদিউল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), চট্টগ্রাম মোহাম্মদ নাজমুল আহসান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( এল এ) মাসুদ কামাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আশরাফুল আলম সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শাহাদাত হোসেন।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম, অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ উপস্থিত ছিলেন।সূত্রে জানা যায়,জঙ্গল সলিমপুর সরকারী পাহাড় দখল বানিজ্য শুরু হয়,১৯৮৮ ইং সালে,দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্মের সন্ধানে আসা ছিন্নমূল লোকজন নগরে নানান কাজে করতে এসে পাহাড়ে ঘর তৈরী করে হাতে গ্রেফতার হন,এরপর এই অপরাধ সর্গরাজ্যের দায়িত্ব নেন ইয়াসিন আরেফিন।ইয়াসিন ও ২২ জুলাই গ্রেফতার হন প্রশানের সামনেই স্হানীয় মেম্বার কে ইউএনওর গাড়ী থেকে নামিয়ে মারধর করার অপরাধে।এর পরই অধপতন ঘটে জঙ্গল সলিমপুরে অপরাধী অবৈধ দখলদার দের।এই এলাকায় সরকার বিবিন্ন প্রকল্প নির্মানের কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন।এখানে গড়ে তোলবেন কেন্দ্রীয় কারাগার,নান্দনিয় মডেল মসজিদ,বেতার কেন্দ্র,প্রশিক্ষন কেন্দ্র,হার্ড ফাউন্ডেশন হাসপাতাল,স্পোর্টস ভিলেজ।যা খুব শিগ্রিই বাস্তবায়ন হবে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।