,ময়মনসিংহ প্রতিনিধি। ময়মনসিংহের কচুর লতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে লন্ডনে! কচুর লতি ‘লতিরাজ’ যাচ্ছে এখন লন্ডনে। এ লতি চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তনের হাতছানি দিয়েছে মো. মিলন মিয়াকে। প্রায় ৫ শ,১০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লতা চাষ করেছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ঝলমলা গ্রামের হাসিম উদ্দিনের পুত্র। নিজের জমি মাত্র ৬০ শতাংশ। বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষের জন্য ১১ জনের কাছ থেকে ৪ শ,৫০ শতাংশ জমি বর্গা (এক বছরের চুক্তিতে) নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে লতিরাজ বারি-১ জাতের লতার চারা রোপণ ও জমি তৈরিতে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার লতি বিক্রি করেছেন। আরও ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হবে। মিলন মিয়া যখন লতি চাষ করে ঝলমলা গ্রামকে ঝলমলে করে তোলেন। তাকে দেখে মাওহা ও অচিন্তপুর ইউনিয়নের আরও অনেকেই লতা চাষ করছেন। তিনি আরও জানান, লতি নিয়ে এখন আর বাজারেও যেতে হয় না। সিলেটের পাইকারি বাজারে লতি বিক্রি হয়। আড়ৎদার নিজে এসে পুরো ক্ষেতের লতিরাজ লতি চুক্তিতে কিনে নিয়েছেন। সিলেটের পাইকার গোলাম রাব্বী জানান, স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে সিংহভাগ লতি লন্ডনে রপ্তানি করা হয়। তিনি আরও জানান, সেখানে বাংলাদেশ পল্লিতে লতির চাহিদা ব্যাপক। আমরা কৃষকদের উৎপাদনে আগাম টাকা দিয়েও লতি চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। মিলন মিয়ার পাশাপাশি লতি চাষ করছেন কৃষক মিরাজ আলী, আবু চান, তোতা মিয়া, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল জলিল, লেয়াকত আলী, আব্দুস সোবহান, আহমেদ হোসেন, সোহরাব মিয়া। কৃষক ফক্কর উদ্দিন জানান, তিনি প্রতি মণ লতি খেতের আইলেই বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬শ টাকা দরে। কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, কচু আর লতি চাষে তেমন সার লাগে না। রোগ-বালাইমুক্ত ও বিষ দিতে হয় না। খরচও কম। তাই তিনি প্রতিবছর লতি ও কচু চাষ করেন। লতি উৎপাদন লাভবান হওয়ায় উপজেলার মাওহা, অচিন্তপুর, সহনাটী ও বোকাইনগরের একাংশ ও রামগোপালপুর ইউনিয়ন ব্যাপকহারে চাষ শুরু হয়েছে। শাহগঞ্জ বাজারের লতির আড়তদার আবুল কালাম জানান, প্রতিদিন সিলেট ও চট্টগ্রামে লতি পাঠাচ্ছেন। প্রতি মণ লতি ১ হাজার ৬শ থেকে ২ হাজার টাকা ধরে কেনা হচ্ছে। বিক্রি কত হবে তা বলতে পারছি না। সেখানে পাইকারি বাজারে লতি বিক্রি হয়। সবজির আরও একটি আড়ত রয়েছে মধ্যবাজারে আলতাব হোসেন খানের। তিনি জানান, লতির চাহিদা ব্যাপক। দামও অনেক। বিভিন্ন মোকামে লতি ক্রয় করে পাঠানো হচ্ছে সিলেটে। ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, মিলন এই এলাকার তরুণদের আইডল। নারী শ্রমিক খোদেজা আক্তার জানান, সংসার গুছিয়ে যে সময়টুকু পাই সেই সময় লতির আঁটি বানাই। এতে দৈনিক ৩শ থেকে ৫শ টাকা আসে। উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার উবায়দুল্লাহ নূরী জানান, কৃষক মিলন মিয়া ও তার আশপাশের প্রত্যেক কৃষককে লতি চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে,উৎপাদনও বাড়ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রাকিবুল হাসান জানান, মাওহা ইউনিয়নে অধিকাংশ কৃষক বারী-১ (লতিরাজ) জাতের কচু চাষ করেছেন। লতি উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় মিলন মিয়ার মতো আরও অনেকেই নতুনভাবে চাষ করছেন। তিনি প্রথমদিকে ৮ বিঘা জমিতে লতি চাষ করেন। ইতোমধ্যে ১২ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। আরও ২০-২৫ টন উৎপাদন হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নীলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, লতি কচু আগাম জাতের চাষ করে অনেকেই দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। তখন প্রতি কেজি ১শ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়। তিনি আরও জানান, আমরা কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এর মধ্যে ১ শ,১৮ হেক্টর জমিতে শুধু লতিরাজ কচুর লতি উৎপাদন হচ্ছে।