রবিউল ইসলাম রবি জমি অন্যের। নেই ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’, নেই সিটি করপোরেশন কর্তৃক স্থাপনার অনুমতি। জমি নিয়ে চলছে দু’পক্ষের মামলা। তবুও অন্যের জমিতে জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রেখেছেন বরিশাল নগরীর চিহ্নিত ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন। এই ভূমিদস্যুকে মামা পরিচয় দিয়ে সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আশিকুর রহমান শাওন। জোরপূর্বক জমি দখলসহ স্থাপনা নিমার্ণের অনুকূলে কাশিপুর ইছাকাঠি সড়কের বাসিন্দা মোঃ আঃ কাদের হাওলাদার ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল এয়ারপোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে এসআই সিদ্দিক জানিয়েছেন। সরেজমিনে এখনও যে কেউ পরিদর্শন করলে ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন সত্যিই যে ভয়ংকর তার প্রমাণ মিলবে। নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের হযরত খানজাহান আলী সড়ক প্রবেশদ্বারে (সরেজমিনে) যাওয়া মাত্রই ছাত্রলীগ নেতা শাওন ভূমিদস্যু মোতালেব কে মামা পরিচয় দেয়। তাই তিনি স্থাপনা নির্মাণাধীন শ্রমিকদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ভূমিদস্যু মোতালেব ও আঞ্চলিক পত্রিকার দু’কথিত ফটোগ্রাফার। রাস্তার পাশে থাকা একটি সাইনবোর্ডে দেখা যায়, ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক কাজী সফিকুল ইসলাম। তাতে রয়েছে দলিল নং ও জমির দাগ খতিয়ান নংসহ বিস্তারিত বর্ণনা। জমির পরিমান (১.২৫ একর)। এমন সময় ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন এসে বলেন, তার সকল বৈধ কাগজপত্র আছে। তবে কোন ক্ষমতা বলে তিনি জমির মালিক এবং স্থাপনা নিমার্ণের অনুকূলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের অনুমতির রয়েছে কিনা ? মোতালেব হোসেন’র কাছে তা জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আশিকুর রহমান শাওন জানান, প্রসেসিং কম্পিলিট। সিটি করপোরেশন থেকে রোববার (১ জানুয়ারী) হাতে পাবো। আর মেয়র তো মোগো নিজেগো লোক। ২/১ দিনের মধ্যে সব গুছ করে ফেলবো। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৯ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আড়াই আরিফুর রহমান মিরাজ জানান, ৩০ ডিসেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোতালেব হোসেনের নিমার্ণাধীন সকল কার্যক্রমকে বন্ধ রাখাতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অনুমতি না নিয়ে আবারো কাজ শুরু করে কিনা। তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে নিমার্ণ কার্যক্রম বৈধ হলে অনুমতি পাবে। আর স্থাপনা অবৈধ হলে সিটি করপোরেশনের নির্দেশ দিলে ভেঙ্গে ফেলা হবে। একদিকে সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে থানায় লিখিত অভিযোগ । এমন পরিস্থিতিতে ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন ও ওই ছাত্রলীগ নেতা শাওন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। স্থানীয় মোঃ আঃ কাদের হাওলাদার বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ ২/১ দিনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলে। যার নং ১৪৮/২০১৭। ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন পূর্বে নাকি এখান থেকে জমি নিলাম নিয়েছিল বলে দাবী করে। যা জাল জালিয়াতি করে তৈরী করেছে। কেননা একাধিকবার সার্স দিয়েও এখানের জমির মধ্যে নিলামের কোন জমি নেই। যার তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে। হঠাৎ করে ভূমিদস্যু মোতালেব ভাড়াটিয়া গুন্ডা নিয়ে অন্যের জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেন তার বৈধ কাগজপত্র আছে বললেও নিজ নামের অনুকূলে ঘটনাস্থলের বিরোধপূর্ণ জমির মধ্যে কোন বৈধ তথ্য দেখাতে সক্ষম হয়নি। তার চলমান নির্মাণাধীন কার্যক্রম করা জমি নিয়ে কোন মামলা নেই বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে ছাত্রলীগ নেতা শাওন জানিয়েছেন, দুই ফটোগ্রাফার ঘটনাস্থলে আসা-যাওয়া সকল সাংবাদিক ম্যানেজ করবে বলে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। এবং আমি দিয়েছি। ওই দুই ফটোগ্রাফার জানিয়েছে, জোর করে শাওন ১৫ শতাধিক টাকা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছে। নিতে চাইনি। তারপরও দিয়েছে। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, ২০০৪-২০০৫ সালেও কাশিপুর বাঘিয়ার হযরত খানজাহান আলী সড়ক সংলগ্ন লাকুটিয়া সড়ক এলাকায় ভাঙ্গা একটি টিনের ঘরে বসে কাগজের প্যাকেট তৈরী করে বাজারে বিক্রি করতো ভূমিদস্যু মোতালেব। অভাবের সংসার ছিল তার। মাত্র কয়েক বছর ব্যবধানে কোটি কোটি টাকার মালিকসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয়েছে জমি ও ভবনের মালিক। এমনকি অনিয়মের অভিযোগে বরিশাল অ্যাংকর সিমেন্ট থেকে চাকরিচ্যুত সার্ভেয়ার মোতালেব হোসেন জালজালিয়াতি করে বহু মানুষের পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমিও তার নামে লিখে নিয়েছেন। জমির দ্বন্দ্ব নিয়ে তার সাথে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের কবলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। ভূমিদস্যু মোতালেবের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে প্রশাসনের সুদৃষ্টি আনতে পারেনি অনেক পরিবারের সদস্যরা। আবার ভূমিদস্যু মোতালেব হোসেনের বিরুদ্ধে কোন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করলে তাদের বিরুদ্ধে হয়রাণীমূলক মামলা দায়ের করে বলে অনেকে জানিয়েছেন। তাই ভূমিদস্যু মোতালেবের অনেক ঘটনা চাপা পরে যায়।